ঢাকারবিবার , ২১ মে ২০২৩
  • অন্যান্য

টেকনিশিয়ান সংকটের কেটে গেছে ১৫ বছর ,ভোগান্তিতে সাধারন মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
মে ২১, ২০২৩ ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ । ৩৩ জন
সংগৃহীত ছবি

চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান–সংকটের কারণে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্ত্রোপচারকক্ষ হাসপাতাল নির্মাণের ১৫ বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসক–সংকটের কারণে শুধু অস্ত্রোপচারই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও রোগীরা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে কম খরচে মানসম্মত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

মেহেরপুর সদর থেকে ১১ ‍কিলোমিটার দূরে ২০০৮ সালে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। এরপর ১৫ বছর কেটে গেলেও হাসপাতালটিতে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। অস্ত্রোপচারকক্ষ (ওটি) বন্ধ পড়ে থাকায় এর যন্ত্রগুলোও নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি শুরুতে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট করা হলেও ২০১৮ সালে সরকার একে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে। তবে এরপর ৫ বছরেও জনবল অনুমোদনসহ ৫০ শয্যার সুযোগ-সুবিধা চালু করা হয়নি। ৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসাবে এখানে ৩৬ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে এখানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র আটজন চিকিৎসক। এতে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালটিকে।

এই আটজন চিকিৎসককেও সার্বক্ষণিক পাওয়া যায় না এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান কখনো ঢাকায় প্রশিক্ষণে থাকেন, আবার কখনো জেলা শহরের বিভিন্ন মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। চিকিৎসা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান ও আকিব হাসান মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল ও গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্ত রয়েছেন। আর সদ্য যোগ দেওয়া গাইনি বিশেষজ্ঞ সাদিয়া শারমিন সপ্তাহে মাত্র দুই দিন রোগী দেখেন। ফলে চারজন চিকিৎসক নিয়মিত হাসপাতালটিতে দায়িত্ব পালন করছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা যায়, এখানে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের আটটি পদই শূন্য। আয়ার পাঁচটি পদ থাকলেও মাত্র দুজন কর্মরত রয়েছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা ১২ জন। পুরো হাসপাতালটিকে মাত্র তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে সামাল দিতে হচ্ছে। মাত্র একটি এক্স-রে যন্ত্র, সেটিও তিন বছর ধরে বিকল পড়ে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, জনবলসংকটে রোগীদের অতি জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা সম্ভব হচ্ছে না এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এমনকি এক্স-রের মতো সাধারণ পরীক্ষাও এখানে হয় না। রক্তের নানা পরীক্ষাও হাসপাতালে করানো সম্ভব হয় না। বেশির ভাগ রোগীকে হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। এতে করে নিম্ন আয়ের রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাসিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত মার্চ মাসে অন্তর্বিভাগে ৮০০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ১০ মে হাসপাতালটিতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৬১। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ১১ হাজার ২০০ রোগী। গত মার্চে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে মাত্র পাঁচটি। অবেদনবিদের অভাবে একটিও সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। জরুরি রোগীদের জেলা শহরের জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, সার্জারি চিকিৎসক, অবেদনবিদ থাকলে ছোট-বড় অস্ত্রোপচার এখানেই করা সম্ভব। ওটির যন্ত্রপাতি ১৫ বছরে একটিবারও ব্যবহার করা হয়নি। এতে যন্ত্রপাতির বর্তমান অবস্থা কেমন, তা বলা মুশকিল। এক্স-রে যন্ত্র বিকল হয়ে রয়েছে টেকনিশিয়ানের অভাবে। সাধারণ রোগীদের টাকা খরচ করে বাইরে থেকে এক্স-রে করাতে হচ্ছে।

হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আহসান হাবিবের কক্ষের সামনে রোগীদের লম্বা লাইন। জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান। চিকিৎসক মেহেদি হাসানের কক্ষের সামনে রোগীদের জটলা দেখা গেছে। গাইনি বিশেষজ্ঞ সাদিয়া শারমিন সপ্তাহে মাত্র দুই দিন রোগী দেখায় এদিন ছিলেন না।

উপজেলার গোপালনগর উত্তর পাড়ার বাসিন্দা রাজিমুন খাতুনের হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে বারান্দায় ঠাঁই হয়েছে। তিনি বলেন, আগের দিন হঠাৎ বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতাল থেকে দুটি স্যালাইন দিয়েছে। এখানে চিকিৎসকের অভাব। কেবল নার্সরা এসে দেখে যাচ্ছেন।

পেটব্যথা নিয়ে  ভর্তি উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা সুন্দরী খাতুন বলেন, নার্সরা এসে একটি করে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলছেন যে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে।

জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শূন্যপদগুলো পূরণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ে লিখিত আকারে কয়েক দফা চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। এরপরও চিকিৎসক ও জনবলসংকট নিরসন করা সম্ভব হয়নি। এরপরও চিকিৎসার মান এখানে ভালো।