ঢাকাশনিবার , ২৫ মার্চ ২০২৩
  • অন্যান্য

ইফতার বাজারে ক্রেতার আনাগোনা থাকলেও বিক্রি নেই

অনলাইন ডেস্ক
মার্চ ২৫, ২০২৩ ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ । ৬৭ জন
ছবি: সংগৃহীত

রমজানের প্রথম দিনেই হাঁকডাকে সরগরম পুরান ঢাকার ইফতার বাজার। প্রতিবারের মতো এবারো বাহারি রকমের ইফতারের আয়োজন ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে। তবে ক্রেতার আনাগোনা থাকলেও বিক্রি নেই আগের মতো। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মানুষ পরিমাণে কম কিনছে। ইফতার বিক্রেতা মো. ইসা সবার সামনে হাঁস উঁচিয়ে দাম হাঁকাচ্ছেন, ‘রাজহাঁস ৩ হাজার টাকা, খাসির লেগফ্রাই ১২০০ টাকা।’ ক্রেতারা তার দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু হাঁস কিংবা খাসির লেগফ্রাইটি কিনতে আগ্রহ দেখা যায়নি। এত দামে রাজহাঁস বিক্রি হবে কিনা জানতে চাইলে ইসা বলেন, শখ করে কেউ না কেউ ঠিক কিনে নেবেন। এই হাঁস সাধারণ ক্রেতাদের জন্য না। হাঁসের দাম এত বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার সবকিছুর দাম বেশি। গতবছর আমরা একটা রাজহাঁস ২ হাজার টাকা বিক্রি করেছি।

আর এবার আমাদেরই কিনতে হয়েছে ২২০০ টাকা দিয়ে। এটা প্রক্রিয়া করতে আরও খরচ হয়েছে। তাই ৩ হাজার টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। মো. ইসার বাবা ১৯৯৪ সালে প্রথম চকবাজারে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর তিনি নিজে ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর এখানে ইফতার বিক্রি করেন। তবে বিগত বছরগুলো থেকে এবার সব ধরনের ইফতারের দাম বেশি বলে জানান তিনি। বলেন, শুক্রবারে প্রথম রোজা পড়ছে তাই ভিড় বেশি। কিন্তু সে অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে কম। অনেকে দাম শুনে না কিনে চলে যাচ্ছে।

পুরান ঢাকার এই ইফতার বাজারের ঐতিহ্য চার শতাব্দীর। অতীতে এখানে ইফতার করাকে বলা হতো ‘রোজা খোলাই’। রমজান মাসে পুরান ঢাকার আদি বাসিন্দারা এখনো এই শব্দটির ব্যবহারে অভ্যস্ত। দেশব্যাপী চকবাজারের এই ইফতার বাজারের খ্যাতি রয়েছে বেশ। পবিত্র রমজানে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখান থেকে ইফতার কিনতে আসেন। গতকাল রমজানের প্রথম দিন। তাই দুপুর থেকেই তোজজোড় ছিল চকবাজারের ইফতার বাজারের ব্যবসায়ীদের। তারা রাস্তার উপর টেবিল বিছিয়ে পসরা দিয়ে রেখেছেন বাহারি ইফতার। এসব খাবারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ‘বড়বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়।’ এক বিক্রেতা জানান, এটি বানাতে মাংস, মাংসের কিমা, সুতি কাবাব, ডিম, মগজ, আলু, ডাবলি, বুটের ডাল, ঘি, কাঁচা ও শুকনো মরিচসহ ৩৬টি উপকরণ প্রয়োজন হয়। চকবাজারের দু’টি দোকানে বিশেষ এই খাবারটি প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

চকবাজারের ইফতার বাজারটিতে সুতা কাবাব, বটি কাবাব, টিকা কাবাব, আস্ত মুরগির কাবাব, শামি কাবাব, শিকের ভারী কাবাব, চিকেন কাঠি, কোয়েল পাখির রোস্ট, কবুতরের রোস্ট, দইবড়া, জিলাপি, শাহি জিলাপি, নিমকপারা, সমুচা, সিংগাড়া, পরোটা, আলাউদ্দিনের হালুয়া, হালিম, কাশ্মীরি শরবত অন্যতম। তবে গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় সবধরনের খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি। ইফতার বাজার ঘুরে দেখা যায়, খাসির সুতা কাবাব ১৪০০ টাকা ও গরুর সুতা কাবাব বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়। গত বছরের চেয়ে এবার ২০০ টাকা করে সুতা কাবাবের দাম বেড়েছে বলেও জানান বিক্রেতারা। চকবাজারে এক পিস মুরগির মসলাদান বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা, গ্রিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, খাসির রান ৭০০ টাকা, পাতিহাঁস ৩০০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বিফ পরোটা ৬০ টাকা, চিকেন পরোটা ৫০ টাকা, নরমাল পরোটা ৩০ টাকা, পিয়াজু, আলুরচপ, বেগুনি ও ভেজিটেবল পাকোড়া প্রতি পিস ৫ টাকা ও ডিমচপ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। এ ছাড়া একবাটি ফালুদা ২০০ টাকা, এক বোতল বোরহানি ১২০ টাকা, পোস্তা বাদামের শরবত ২০০ টাকা ও মাঠা ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানান, সবকিছুর দামই ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে মুরগি, গরু ও খাসির দাম বাড়ার কারণে মাংসজাতীয় খাবারগুলো তৈরিতে বেশি খরচ হচ্ছে। এ ছাড়া এসব খাবার বানানোর উপকরণগুলোও গতবারের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হয়েছে তাদের। তাই এসব ঐতিহ্যবাহী খাবারের দাম বেড়েছে। বিক্রেতা হেলাল বলেন, গত বছর ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। কিন্তু এবার ৮০০ টাকায় বিক্রি করছি। গতবারের চেয়ে এবার সবকিছুর দাম বেড়েছে। এসব খাবার বানাতে আগের চেয়ে আমাদের খরচও বেড়েছে। প্রথম দিনের হিসেবে বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছুটির দিনে মানুষ বেশি। কিন্তু সেভাবে কেউ কিনছে না। আর যারা কিনছে তারাও কম কম কিনছে। এককেজির জায়গায় আধাকেজি কিনছে।

প্রথম রোজায় চকবাজারে ইফতার কিনতে এসেছিলেন হাসিবুর রহমান। তিনি জানান, প্রতি বছর পরিবারের জন্য এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের ইফতার সামগ্রী কিনেন। এবারো এসেছেন কিনতে। তিনি বলেন, চকবাজারে এবার সবকিছুর দামই তো আগের চেয়ে বেশি। আধাকেজি জিলাপি কিনলাম ১২০ টাকা দিয়ে। গতবার দাম আরও কম ছিল। নাহিদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এখান থেকে ইফতার কেনার জন্য শাহী মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে এসেছি। প্রতিবারই কয়েকবার করে আসা হয় এখানে। দামও চড়া থাকে। তাও ঐতিহ্যের কারণে এখানে আসা হয়।

তিন যুগের বেশি সময় ধরে চকবাজারে ইফতার বিক্রি করেন খোকন মিয়া। তিনি বলেন, আমরা প্রতি বছরই এখানে দোকান দিই। দাম কিছুটা বেশি হলেও মানুষ কিনতে আসে। এটা আমাদের অনেকদিনের ঐতিহ্য। বিকাল ৩টা থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত ভরপুর বেচাকেনা হয়। দাম বেশি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবকিছুর দামই তো বেশি। তাই ইফতারের দামও এবার বেশি। এজন্য ক্রেতাদের সঙ্গে একটু দাম দর করে বিক্রি করতে হয়।