ঢাকাশনিবার , ৮ এপ্রিল ২০২৩
  • অন্যান্য

আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও বেতন মেলেনি সাড়ে ৩৭ হাজার শিক্ষকের

অনলাইন ডেস্ক
এপ্রিল ৮, ২০২৩ ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ । ৮০ জন
ছবি: সংগৃহীত

সরকারি চাকরির জন্য দীর্ঘ চার বছর লড়াই করেছেন শফিকুল ইসলাম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর নেমেছিলেন সরকারি চাকরির
যুদ্ধে। বয়স ৩০ ছুঁই ছুঁই। শেষ সময়ে চাকরি হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে। যোগদান করেছেন চলতি বছরের ২৩শে জানুয়ারি। এরমধ্যে বিয়ে করে নতুন সংসারও শুরু করেছেন। কিন্তু চাকরিতে যোগ দেয়ার প্রায় আড়াই মাস পার করলেও এখনো মেলেনি কোনো বেতন। চাকরি ও বিয়ের পর প্রথম ঈদ। এখনো কোনো বেতন ভাতা না মেলায় হতাশায় পড়ে গেছেন তিনি।

একই ধরনের অসহায়ত্বের কথা বলেন গাইবান্ধায় যোগ দেয়া শিক্ষক নাহিদ হাসান। তিনিও ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

নাহিদ বলেন, জীবনের প্রথম আয়টা পেয়েও যেন পাচ্ছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ এরপর বেকার থাকা অবস্থায় বাবা মায়ের কাছে টাকা নিয়ে চলতে হয়েছে। এখন চাকরি হওয়ার পরও বাবা মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলতে হচ্ছে।

চলতি বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সার্কুলারে একেবারে প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। বিপুলসংখ্যক এই শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার পর যোগদান করেছেন জানুয়ারিতে। আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো মেলেনি কোনো অর্থ। শুধু বেতন না। এই সময়ে এই শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতা ও ঈদ ভাতাও মেলেনি। ঈদ সামনে রেখে নতুন যোগ দেয়া এই শিক্ষকরা কোনো বেতন না পেয়ে ভুগছেন হতাশায়।

নিয়োগ পাওয়া সাড়ে ৩৭ হাজার শিক্ষকের মধ্যে প্রায় সাত হাজার শিক্ষক সরাসরি রাজস্ব খাতভুক্ত। বাকি শিক্ষকরা চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) আওতায় সাব-কম্পোনেন্ট ‘প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা’র আওতায়। এই শিক্ষকদের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের বেতন ছাড় করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। মোট ছাড়কৃত অর্থের পরিমাণ দুইশ’ ৫৯ কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার দুইশ’ ৫০ টাকা। চলতি বছরের ২২শে মার্চ জারি করা হয় এই বিজ্ঞপ্তি। ছাড়কৃত অর্থ ৯টি খাতে ব্যবহার করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে মূল বেতন প্রায় ১৪০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, বাড়ি ভাড়া প্রায় ৬৩ কোটি ৫১ লাখ, চিকিৎসা ভাতা প্রায় ১৯ কোটি ১৯ লাখ, উৎসব ভাতা প্রায় ২৬ কোটি ৫৬ লাখ, নববর্ষ ভাতা প্রায় পাঁচ কোটি ৩১ লাখ, টিফিন ভাতা প্রায় দুই কোটি ৫৫ লাখ, শিক্ষা ভাতা প্রায় ৭৩ লাখ, যাতায়াত ভাতা প্রায় সাত লাখ ৬৬ হাজার ও হাওর/দ্বীপ/চর ভাতা ৮৫ লাখ টাকা।

নতুন করে যোগ দেয়া শিক্ষকরা বেতন ভাতা না পেয়ে অসহায় দিন যাপন করছেন। আকাশ মজুমদার নামে এক শিক্ষক বলেন, চাকরিতে যোগ দিলাম আড়াই মাস। এখন পর্যন্ত নিজের আয়ের টাকা দেখতে কেমন তাই জানলাম না। এখন ঈদের সময়েও যদি টাকাটা না পাই খুবই খারাপ হবে। চাকরির পরও বাবা-মাকে একটা কাপড় কিনে দিতে পারবো না, এটা খুবই দুঃখজনক।

জেলা ও উপজেলা একাধিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বলছেন, অর্থ ছাড় হয়েছে। কিন্তু কবে শিক্ষকরা বেতন পাবেন তারা জানেন না। নতুন যোগদান করা শিক্ষকরাও একাধিকবার ফোন করে তাদের বেতনের তথ্য জানতে চাচ্ছেন কিন্তু তারা কোনো নির্দিষ্ট তারিখ জানাতে পারছে না। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) একাধিক কর্মকর্তা বৈঠকের পরই এই তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান। জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডিপিই ও অর্থ মন্ত্রণালয় বৈঠকে বসতে যাচ্ছে আগামী রোববার। ৯ই এপ্রিলের এই বৈঠকে ঈদের আগে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদান নিয়ে আলোচনা হবে।

ডিপিই’র এক কর্মকর্তা বলেন, ঈদের আগে শিক্ষকদের বেতন প্রদানের সম্ভাবনা কম। তবে ডিপিই চেষ্টা করছে ঈদের আগেই এই ভাতা প্রদানের। তিনি বলেন, কবে ঈদের আগে বেতন ভাতা না পেলেও সমস্যা নেই। এই অর্থ ভবিষ্যতে তারা পেয়ে যাবেন। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ বিভাগ) মিজানুুল হক বলেন, আগামী রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বৈঠক আছে সেখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমরা চেষ্টা করছি ঈদের আগেই বেতন-ভাতা প্রদানের।

নতুন যোগ দেয়া শিক্ষকদের সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ২০২০ সালে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরাও। তারা অভিযোগ করেন, যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের উৎসব ভাতা পাননি। এ নিয়ে শিক্ষকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করছে ডিপিই। তবে শিক্ষকরা বলছেন, ঈদের আগে এই তথ্য সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। এই কর্মকাণ্ড শেষ করে ঈদের আগে ভাতা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না তারা। এত অল্প সময়ের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষকদের হাতে উৎসব ভাতা পৌঁছে দেয়া সম্ভব নয়। আর ঈদ শেষে উৎসব ভাতা দেয়ার অতীতে কোনো নজির নেই।
৩ই এপ্রিল অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ) এইচ এম আবুল বাশার সব জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে সাত ধরনের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। এতে প্রত্যেক জেলায় সদ্য যোগদান করা শিক্ষক সংখ্যা, গত ঈদুল আজহায় কত সংখ্যক শিক্ষক উৎসব ভাতা পেয়েছেন, শিক্ষা ভাতা পাওয়া শিক্ষকদের প্রকৃত সংখ্যাসহ সাত ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০২০ এর প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য সৃষ্ট পদে নিয়োগকৃত সহকারী শিক্ষকদের নির্ধারিত সময়ে যথাযথ উৎসব ভাতা ও শিক্ষা ভাতা বরাদ্দের জন্য উল্লিখিত তথ্যগুলো প্রয়োজন। নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে চলতি অর্থবছরে শুধুমাত্র ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার উৎসব ভাতা প্রাপ্য হবেন। একই সঙ্গে শিক্ষা ভাতা পাওয়া শিক্ষকদের তথ্যও প্রয়োজন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তার আওতাধীন সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্যগুলো আগামী ১০ই এপ্রিলের মধ্যে উপজেলাভিত্তিক তথ্য নির্ধারিত ই-মেইলে পাঠাতে হবে।