নির্ধারিত সময়ে নবায়ন ফি না দেওয়ায় শেয়ারবাজারে গত দেড় মাসে প্রায় ৬০ হাজার বেনিফিশিয়ারি ওনার (বিও) অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় পুরুষ ৪৪ হাজার ৮৪ এবং ১৫ হাজার ৩৭২ নারীদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। লেট ফি দিয়েও এসব অ্যাকাউন্ট আর চালু করা যাবে না। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয় ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সিডিবিএল (সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেড)। নবায়নের শেষ সময় ছিল ৩০ জুন। তবে ব্রোকারেজ হাউজগুলো জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে নিষ্ক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধের তালিকা পাঠানো শুরু হয়। আর সর্বশেষ হিসাবে দেশের শেয়ারবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ১৩ হাজার ২৪২টি। সিডিবিএল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন বাজারের স্বচ্ছতায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বিও অ্যাকাউন্ট নবায়ন করতে ৫০০ টাকা লাগে। এর মধ্যে সিডিবিএল ১০০ টাকা, হিসাব পরিচালনাকারী ব্রোকারেজ হাউজ ১০০ টাকা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি) ৫০ টাকা এবং বিএসইসির মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে ২০০ টাকা জমা হয়।
জানা গেছে, প্রতি বছর ৩০ জুনের মধ্যে এই ফি সিডিবিএলে জমা দিতে হয়। এ বছর ব্রোকারেজ হাউজগুলো বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের সক্রিয়তা বিবেচনা করে বছরের বিভিন্ন সময়ে অ্যাকাউন্ট বাতিল করে। আর নবায়ন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় জুনে বেশির ভাগ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়। গত ১ জুন শেয়ারবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৭২ হাজার ৯১৮টি। বর্তমানে তা ১৮ লাখ ১৩ হাজারে ২৪২ নেমে এসেছে। ফলে ৫৯ হাজার ৬৭৬ বিও বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে মোট বিও অ্যাকাউন্টের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারী ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫৩, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ৫৭ হাজার ৬৮৬ এবং বিভিন্ন কোম্পানি ১৬ হাজার ৬০৩টি। তবে সিডিবিএল সূত্র বলছে, ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও অলিখিতভাবে আরও কিছু দিন সময় রয়েছে। কিছু হাউজ এখনো তালিকা পাঠানো অব্যাহত রেখেছে। ফলে অ্যাকাউন্ট বাতিলের সংখ্যা আরও বাড়বে। গত বছর এ প্রক্রিয়ায় তারা দুই লাখ বিও অ্যাকাউন্ট বাতিল করেছিল। তবে যেসব অ্যাকাউন্টে শেয়ার আছে, অথবা টাকা জমা আছে, ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়।
এ ছাড়া বেশ কিছু হাউজ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সিকিউরিটি ডিপোজিট বা জামানত জমা দিয়েছে। ওইসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিডিবিএলের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ব্রোকারেজ হাউজ থেকে বন্ধের তালিকা পাঠানো হয়। এটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে সিডিবিএলের খুব বেশি কিছু করার নেই। তিনি বলেন, একবার বন্ধ হলে ওই অ্যাকাউন্ট আর চালু হয় না।
সিডিবিএলের তথ্য অনুসারে, রোববার পর্যন্ত ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ২০৮ সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। এগুলোতে শেয়ার আছে এবং এগুলো থেকে নিয়মিত লেনদেন হয়। এছাড়া তিন লাখ ৫১ হাজার ৭৪৯টি অ্যাকাউন্টে কখনো কখনো শেয়ার থাকলেও বর্তমানে শূন্য রয়েছে। ৭২ হাজার ২৮৫ বিও অ্যাকাউন্টে কখনোই কোনো শেয়ার ছিল না। এসব বিও অ্যাকাউন্ট সাধারণত আইপিওর জন্য ব্যবহার করা হয়। লটারিতে কোনো শেয়ার বরাদ্দ পায়নি বলে এসব অ্যাকাউন্টে কোনো শেয়ার নেই। আর শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৭৮ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৭টি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। অন্যদিকে বতর্মানে যেসব অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাতে মোট শেয়ার সংখ্যা ৯ হাজার ৬১১ কোটি টাকা।
এসব শেয়ারের বাজারমূল্য তিন কোটি ৯৮ লাখ ৯৩৩ কোটি টাকা। সূত্র জানায়. আগে পুঁজিবাজারে আইপিও আবেদনের জন্য নামে-বেনামে প্রচুর বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হতো। একই ব্যক্তি এক থেকে দেড়শ পর্যন্ত বিও অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে। আর এসব বিওতে শুধু আইপিও আবেদন করা হয়। ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ। কিন্তু ২০১০ সাল শেষে তা ৩৩ লাখ ছাড়িয়ে যায়। আর এই প্রবণতা রোধে বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়।