দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একাধিক স্থানে তাদের শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। মূল ক্যাম্পাসের প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের দিয়ে তদারকি করা হচ্ছে শাখা ক্যাম্পাসগুলো। সার্বক্ষণিক তদারকির ঘাটতি থাকায় এসব শাখায় একদিকে কমছে শিক্ষার মান, ভোগান্তিতে পড়ছেন অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি শাখা ক্যাম্পাসের জন্য পৃথক ইআইআইএন (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচিতি নম্বর) বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রতিটি শাখা ক্যাম্পাসের জন্য প্রতিষ্ঠানপ্রধান নিয়োগ নিশ্চিত করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০২৩’-এ এই বাধ্যবাধকতা আছে। খসড়া নীতিমালাটি অনুমোদনের প্রক্রিয়া হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে খসড় নীতিমালাটি অনুমোদন পেতে পারে।
এরপর শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে। শাখা ক্যাম্পাসের বিষয়ে আইন না থাকার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনা যাচ্ছে না। এই নীতিমালা প্রকাশের পর শিক্ষা বোর্ড থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিটি শাখা ক্যাম্পাসের জন্য পৃথক ইআইআইএন নম্বর সংগ্রের জন্য চিঠি দেবে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে তাদের অননুমোদিত ক্যাম্পাসের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজসহ দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একাধিক শাখা ক্যাম্পাসে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসার মূল ক্যাম্পাস ছাড়াও ধানমণ্ডি, আজিমপুর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তিনটি শাখা ক্যাম্পাস পরিচালিত হচ্ছে। মতিঝিলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ক্যাম্পাস ছাড়াও বনশ্রী ও মুগদা এলাকায় আরো দুটি শাখা ক্যাম্পাস আছে। বারিধারা, মালিবাগ, মিরপুর, বনানী ও উত্তরায় মোট পাঁচটি ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ। মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মূল ক্যাম্পাস ছাড়াও আরো চারটি ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে।
একজন শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন প্রতিষ্ঠানপ্রধান (প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ) দিয়ে বাকি পাঁচ-ছয়টি শাখা ক্যাম্পাস পরিচালিত হয়। অথচ প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা বেশির ভাগ সময় মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন। সেখান থেকেই শাখা ক্যাম্পাসের জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। শাখা ক্যাম্পাসগুলোতে সার্বক্ষণিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষার মান তদারকি না থাকার কারণে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যায় না।ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে দেখা যায়, একটি স্কুল নামে পরিচিত হওয়ার পর তার অনেক শাখা খোলা হয়। উপযুক্ত জনবল নিয়োগ না দিয়ে তখন মূলত বাণিজ্য প্রাধান্য পায়। প্রতিটি শাখা ক্যাম্পাসে বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে যথাযথভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ বিষয়ে শুধু নীতিমালা করলে হবে না, তার প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা না গেলে নীতিমালা করে লাভ হবে না।