সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযোগ তারা হাসপাতালের চাইতে ব্যক্তিগত চেম্বারে বেশি সময় দেন। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে করে ভোগান্তির শিকার হতে হয় রোগীদের। তবে এবার থেকে সে সুযোগ আর থাকছে না বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
আগামী মার্চ মাসের ১ তারিখ থেকে সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নির্দিষ্ট অফিস সময়ের বাইরে নিজের হাসপাতালেই চেম্বারের মাধ্যমে রোগী দেখতে হবে, পর্যায়ক্রমে এ সংক্রান্ত পাইলট প্রজেক্ট বাস্তবায়ন শুরু হবে। এই ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’। এ ব্যবস্থায় চিকিৎসক তার অফিস সময়ের পর নিজ কর্মস্থলে বসে রোগী দেখতে পারবেন। রোগীপ্রতি চিকিৎসকের সর্বোচ্চ ফি ৩০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা। সরকারি হাসপাতালে ‘প্রাইভেট চেম্বার’ চালুর বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত একটি কমিটির খসড়া নীতিমালায় এ প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তক ২২ জানুয়ারি সরকারি হাসপাতালে ‘প্রাইভেট চেম্বার’ চালুর বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ২০ জনকে কমিটির সদস্য করা হয়। পরে আরও ছয়জন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ‘প্রাইভেট চেম্বার’ কিভাবে চলবে, সে বিষয়ে ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’ নামের একটি খসড়া নীতিমালা ইতোমধ্যে তৈরি করেছে কমিটি। অফিস সময়ের পর নিজ কর্মস্থলে চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারের সময় হবে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। সেবা পেতে রোগীকে টিকিট কাটতে হবে। জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের ফি হবে ৩০০ টাকা। কনিষ্ঠ চিকিৎসকের ফি ১৫০ টাকা। ফি থেকে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক পাবেন ২০০ টাকা। তার সহায়তাকারী পাবেন ৫০ টাকা। বাকি ৫০ টাকা সরকারি তহবিলে জমা পড়বে। ফি থেকে কনিষ্ঠ চিকিৎসক পাবেন ১০০ টাকা। তার সহায়তাকারী পাবেন ২৫ টাকা। বাকি ২৫ টাকা যাবে সরকারি তহবিলে।
একজন অধ্যাপক সপ্তাহে দুইদিন, সহযোগী অধ্যাপক দুইদিন, সহকারী অধ্যাপক দুইদিন রোগী দেখবেন। চিকিৎসক যদি রোগীকে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেন, রোগী চাইলে তা সরকারি হাসপাতালে করতে পারবেন। আবার বেসরকারি হাসপাতালেও করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে উপজেলা পর্যায়ে ৫০টি, জেলা পর্যায়ে ২০টি, বিভাগীয় ৮টি ও বিশেষায়িত ৫টি সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বার চালু হবে। আগামী আগস্টের মধ্যে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বার চালুর পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয়। স্বাধীনতার মাস অর্থাৎ মার্চের ১ তারিখ থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। চিকিৎসকরা ডিউটি সময়ের বাইরে বিভিন্ন ক্লিনিক বা ফার্মেসিতে যেভাবে চেম্বার খুলে রোগী দেখতেন, সরকারি এই বিশেষ সুবিধায় নিজ নিজ কর্মস্থলেই তারা সেই সুযোগ পাবেন।
দেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর এই কাজের শুরুটি হবে মহান স্বাধীনতার মাস মার্চ মাসের শুরু থেকেই। এই কাজটি শুরু হলে দেশের লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন ক্লিনিক, ফার্মেসিতে ডাক্তার দেখানোর ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেন। প্রথমবারের মতো ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের বিষয়ে বলা হলেও রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ২০১১ সাল থেকেই রোগীদের বৈকালিক সেবা দেওয়া হচ্ছে। এখানে হাসপাতালের কর্মঘণ্টা শেষে ২৬টি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা শুক্র ও শনিবার বাদে বাকি পাঁচদিন ২০০ টাকা ফি নিয়ে রোগী দেখেন।
গতানুগতিকভাবে সিনিয়র অধ্যাপকরা জুনিয়র মেডিক্যাল অফিসারদের বসিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত চেম্বারে চলে যান। এটার তদারকিতে আর কেউ থাকেন না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে সরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্র কেমন হবে? ওখানে তো মেডিক্যাল অফিসারও থাকবেন না। পরে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের বিষয়টি শুধু কাগজে কলমেই রয়ে যাবে, যা কোনোক্রমেই কাক্সিক্ষত নয়। বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ছয় হাজার চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। এরপরও প্রতিবছর অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নেন। নিজ হাসপাতালেই চিকিৎসকদের চেম্বারের ব্যবস্থা করতে পারলে রোগীদের বিদেশে চিকিৎসানির্ভরতা অনেকটা কমবে।
আমরা মনে করি, চিকিৎসকদের নির্দিষ্ট অফিস সময়ের বাইরে নিজ চেম্বারেই চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থার দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।