অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন বাংলাদেশ নিয়ে মানুষের স্বপ্ন, গুরুত্বপূর্ণ নানা খাতে সংস্কারের মাধ্যমে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন, গণতন্ত্রের উত্তরণ ও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। ২ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও কূটনৈতিক প্রতিবেদক রাহীদ এজাজ। আজ পড়ুন শেষ পর্ব।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় অনেক হত্যাকাণ্ড হয়েছে, বিচার সবাই চাইছেন। অনেক কথা বলা হচ্ছে, আপনি বলছেন। শেখ হাসিনার বিচার চাওয়া হচ্ছে। তিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁর বিচারটা বা তাঁর প্রত্যর্পণ নিয়ে, তাঁকে ফিরে পাওয়ার কথাটাও বলা হচ্ছে। এই বিচার বা শেখ হাসিনার বিচার, তাঁকে ফিরে পাওয়া—এ বিষয়ে কোনো চিন্তা আপনার বা আপনাদের আছে?
এসবে আমাদের থাকার দরকার নেই। আমরা বিচারব্যবস্থা সংস্কারে বসেছি। বিচারব্যবস্থার সংস্কার করলে সংস্কারের ভেতর দিয়ে কার বিচার করবেন, কীভাবে বিচার করবেন, কে বিচার করবে, সবকিছু আসবে। এখন আমরা তো পলিটিক্যাল ডিসিশন দিতে যাচ্ছি না। আমরা শুধু পরিমণ্ডলটা সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। এই পরিমণ্ডল দিয়ে যেভাবে অগ্রসর হতে চান, সেভাবে হবে। আপনারাই বানিয়ে দিয়েছেন, আমরা শুধু ফেসিলিটেট করে দেব।
কিন্তু এসব অন্যায়-অবিচারের পেছনে একটি সরকার, সরকারপ্রধান, মন্ত্রিপরিষদ বা নেতৃবৃন্দ ছিলেন, তাঁদের ব্যাপারে তো আলোচনা বা দাবি এসেছে…
সে জন্য তাঁদের যেখানে পাওয়া যাচ্ছে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সবকিছু হচ্ছে। বিচার করছি না কিন্তু। বিচারটা আগে ঠিক করেন, কীভাবে বিচারপ্রক্রিয়া হবে। সেই বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার করবেন।
এই গ্রেপ্তারগুলো নিয়ে বা মামলা দেওয়ার বিষয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। কতটুকু সত্য বা কতটুকু অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে বা মামলা করে এই বিচারকে কতটুকু এগিয়ে নেওয়া যাবে। এসব প্রশ্ন মানুষের মনে আছে। সন্দেহ দাঁড়িয়ে গেছে। অনেকে বলতে চায় যে অতীতের মতোই মামলাগুলো হচ্ছে, গায়েবি মামলা। এ দায় তো আপনাদের ওপর এসে পড়ছে, যদিও সরকার মামলা করছে না। এ দায় তো আপনি এড়াতে পারছেন না।
সে জন্যই জুডিশিয়ারির সংস্কার দরকার। আমি একা বলে দিলে তো হবে না। এটা তো তাহলে বিচার হলো না। এটা আইনের ভেতর দিয়ে আইনমতো হচ্ছে। কিন্তু আইনটা ভালো নয়। এ আইনগুলো পাল্টানো দরকার। কাজেই সেভাবেই আসতে হবে। আমরা এককভাবে একটা ঘোষণা দিয়ে দিলাম, তাহলে তো আবার আমরা একনায়কতন্ত্রের দিকে চলে গেলাম। আমরা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে চাচ্ছি। ধীরে আসতে চাচ্ছি। বিচারপ্রক্রিয়া এমন জিনিস, এখানে যে ভুল হচ্ছে না, তা নয়। ভুল হচ্ছে। ভুলটা ধরিয়ে দিলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করার চেষ্টা করছি। আবার বলছেন আপনারা সিদ্ধান্ত পাল্টান। এ জন্যই আমাদের ভুল ধরিয়ে দিলে আমরা সিদ্ধান্ত পাল্টাই।
এর মধ্যে সমাজে হানাহানি-বিদ্বেষ, এগুলো খুব দেখা যায়। ‘মব জাস্টিস’ বলে একটা জিনিস চালু হয়ে গেছে। বেশ কিছু মানুষ মারা গেছেন। সমাজের মধ্যে একটা অস্থিরতা এসে গেছে। এটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
ড. ইউনূস: ওই যে ল অ্যান্ড অর্ডার স্টাবলিশ করা। এগুলো হলো ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশনের বিষয়। এখানে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নেই। এখানে যে হত্যাকাণ্ড, মব জাস্টিস হচ্ছে, এগুলো হচ্ছে ল অ্যান্ড অর্ডারের বিষয়। ল অ্যান্ড অর্ডার শক্ত করতে পারলে এ জিনিসগুলো হবে না। সামাজিক তৎপরতা যদি বাড়াই, মানুষ মানুষের প্রতি যত্ন নেয়, তাহলে এগুলো হবে না। সরকার গিয়ে মারামারি থামাতে পারবে না। মারামারি করলে শাস্তি হবে, এটুকু আমরা বলতে পারি। আমরা বারবার বলছি, আমরা একটি পরিবার। আমাদের মতের ভিন্নতা থাকতে পারে। এ জন্য কেউ কারও শত্রু নই। এ জিনিসটা যেন আমরা পরিষ্কার রাখি
এটাও আমাদের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। কাজেই যখন রাজনৈতিক দলগুলো বসবে, তারা সিদ্ধান্ত নেবে। যত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আছে, সেগুলো আমরা রাজনীতিবিদদের কাছে নিয়ে যাব। তাঁরা যেভাবে সিদ্ধান্ত দেন।