ঢাকামঙ্গলবার , ৭ মার্চ ২০২৩
  • অন্যান্য

নারী পুরুষ সমানতালে এগিয়ে চলছে পুলিশে

অনলাইন ডেস্ক
মার্চ ৭, ২০২৩ ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ । ৯৩ জন
নারী সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করছে সকল দায়িত্ব

পুলিশ বাহিনীতে পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে চলছে নারী সদস্যরা। তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করছে বিভিন্ন দায়িত্ব। প্রয়োজনীয় যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে অতিরিক্ত আইজিপি পদেও পদোন্নতি পেয়েছেন।

কনস্টেবল ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে মাত্র ১৪ জনকে নিয়ে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশে নারীর যাত্রা শুরু। সময়ের পরিবর্তনে ২০২৩ সালে এসে সেই সংখ্যা এখন ১৮ হাজারের বেশি। নারী পুলিশ সদস্যরা এখন দায়িত্ব পালন করছেন উচ্চ পর্যায়েও। এই মুহূর্তে উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হিসাবে কর্মরত আছেন বেশ কয়েকজন। অতীতে অলংকৃত করেছেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের পদও। নারীর এই অগ্রযাত্রার পথ একেবারে সহজ ছিল না। মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের। নারী পুলিশ সদস্যদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে এক শ্রেণির পুরুষ কর্মকর্তার অসংবেদনশীলতা এই সমস্যা আরও প্রকট করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ সমস্যা নেই বললেই চলে।

পুলিশের নারী সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই কাজ করছে বাহিনীতে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান পরিচালনা থেকে শুরু করে চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটন করছেন তারা। মেধা, যোগ্যতা, সাহসিকতা ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কাজ করছেন। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ, জলদস্যুদের দমন ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নিচ্ছেন তারা। দায়িত্ব পালনকালে জীবনও বিলিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। অগ্রিম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মোকাবিলায়ও রাখছেন অবদান। কাজ করছেন নারী নির্যাতন, পাচার ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, একতরফা তালাকের ক্ষেত্রে দেনমোহর ও খোরপোষ আদায় এবং যৌতুকসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে। সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতেও নারী পুলিশ সদস্যদের এখন দেখা যায় সরব ভূমিকায়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছেন নারী পুলিশ সদস্যরা। সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এর কলা সেবা সেন্টারের ৮০ ভাগ সদস্যই নারী পুলিশ। সারা দেশের নয়টি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার এবং ৫৫৯টি থানার বেশিরভাগ নারী ও শিশু ডেস্ক পরিচালনা করছেন পুলিশের নারী সদস্যরা। এপিবিএন-১১-তে কর্মরত পুলিশের সব সদস্যই নারী। এই মুহূর্তে দুটি জেলার এসপি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন নারী। এদের মধ্যে গোপালগঞ্জে আয়েশা সিদ্দিকা এবং নড়াইলে সাদিরা খাতুন দায়িত্ব পালন করছেন। অথীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন থানায় নারীরা ওসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেও এই মুহূর্তে দেশের কোনো থানায় নারী ওসি নেই। তবে ৩০টি থানায় নতুন নারী ওসি নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ২০১০ সাল থেকে কঙ্গোতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন পরিচালনা করছেন বাংলাদেশের নারী পুলিশ। এখানে এ পর্যন্ত এক হাজার ৪৫১ জন নারী পুলিশ কাজ করেছেন।

পুলিশের একাধিক নারী সদস্য জানান, নারীদের জন্য কর্মপরিবেশ আগের চেয়ে উন্নত হলেও পুরোপুরি সন্তোষজনক নয়। কনস্টেবল, নায়েক, এএসআই, এসআইদের মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। অসৎ উদ্দেশ্যে পুরুষ সদস্যদের দ্বারা নারীদের হয়রানির অভিযোগও এসেছে বিভিন্ন সময়ে। নারীদের বেশি সমস্যায় পড়তে হয় রাত্রীকালীন ডিউটিতে। নারীবান্ধব টয়লেটের অপর্যাপ্ততা এবং নারী পুলিশের আবাসন সমস্যা দীর্ঘদিনের।

পুলিশের এই মুহূর্তে ডিআইজি হিসেবে কর্মরত আছেন চারজন নারী। তারা হলেন আমেনা বেগম, আতিকা ইসলাম, সালমা বেগম এবং শামীমা বেগম। এদের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি আমেনা বেগম। তিনি পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার, নরসিংদী ও রাঙ্গামাটির এসপি হিসেবে কাজ করেন। এসপি হিসাবে তিনি হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্ব পালন করেন। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইম্যান পুলিশ এশিয়া অঞ্চলের সমন্বয়কারী হিসাবে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ডিআইজি আতিকা ইসলাম এবং সালমা বেগম এখন হাইওয়ে পুলিশে কাজ করছেন। আতিকা এর আগে র‌্যাবের একটি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ডিআইজি সালমা বেগম নারী এপিবিএনের (এপিবিএন-১১) প্রথম অধিনায়ক ছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ডিএমপিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। চাকরিজীবনের শুরুতে তিনি রাজবাড়ী জেলার সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসাবে কাজ করেন। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া হাইওয়ে পুলিশে অতিরিক্তি ডিআইজি হিসেবে নারী পুলিশের দুজন সদস্য কাজ করছেন। এই দুজনের নামই ফরিদা ইয়াসমিন।

বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি আমেনা বেগম যুগান্তরকে বলেন, নারীদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পুরুষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং নারীর সংখ্যায় কম হওয়া। কারণ পুলিশের মোট জনবলের চেয়ে নারীর সংখ্যা মাত্র ৭ ভাগ। এটা ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ হলে ভালো হতো। আগামীতে নারী পুলিশকে আভিযানিক কাজে আরও দৃশ্যমান হিসাবে দেখার আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, কাজের সময় আমি কখনো নিজেকে নারী মনে করি না। সবসময় পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করেছি। এখনও করছি।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশে বর্তমানে মোট জনবল প্রায় দুই লাখ। এর মধ্যে ডিআইজি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত ১৮ হাজার ৩৮০ নারী সদস্য রয়েছেন। চারজন ডিআইজি ছাড়াও বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৯ জন, পুলিশ সুপার পদে ৬৯ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে ১২২ জন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পদে ৯৮ জন এবং সহকারী পুলিশ সুপার পদে ১৫৯ জন ক্যাডার কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) প্রথম সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে যোগদান করেন ফাতেমা বেগম নামে এক নারী। ফাতেমা বেগমের যোগদানের পরের ব্যাচে ১৯৮৮ সালে সপ্তম বিসিএসের মাধ্যমে যোগদান করেন ৪ নারী। কিন্তু ১৯৮৯ সালে পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন পদে নারী পুলিশ অফিসারদের নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই অষ্টম বিসিএস থেকে ১৭তম বিসিএস পর্যন্ত কোনো নারীকে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএসের মাধ্যমে ৮ নারী পুলিশের এএসপি পদে যোগদানের মাধ্যমে ফের পুলিশ ক্যাডারে নারীদের প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত হয়।